স্কুল বলতে আমরা বিদ্যালয় কে বুঝি। যা বিদ্যা এবং আলোর সন্ধি। বিদ্যালয় বললে কেমন জানি…
স্বপ্ন দেখুন, স্বপ্ন পুরন হয়
হিমেলের স্বপ্নগুলো আজো মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলে। সাদা কাল মেঘের ভেলায় যেন সূর্যের আলোকে খুজে ফেরা তার চিরন্তন প্রয়াস।
যারা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই গল্প…
হিমেল মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের একটি অতি সাধারণ ছেলের নাম। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্নকে এড়িয়ে চলে চাইত সে। কারন সে জানতো যে তার অবস্থান থেকে স্বপ্ন দেখা নেহায়েত অযাচিত বিলাসিতা ভিন্ন আর কিছুই নয়। কিন্তু স্বপ্ন তার পিছু ছাড়েনি। শুরু হয় ছোট ছোট স্বপ্নের বুনন।
কখনো ভাবতো, ইশ আমার যদি একটা মোবাইল ফোন থাকতো, একটা বাইক থাকতো, কিছু ভালো বন্ধু থাকতো, অনেক টাকা থাকতো!
ক্ষুব মেধাবী থাকা সত্ত্বেও পরিবারের অনীহা আর অর্থের অভাবে ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেনি হিমেল।
স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবার। কিন্তু যথাযথ পরিচর্যা আর পরিবেশ না পেলে যেমন বৃক্ষ ফল দিতে কারচুপি করে ঠিক তেমনি হিমেলের ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দিনে দিনে ফিকে হতে থাকে। খুব সাধারণ একটা গ্রামের কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় সে। কিন্তু তার পরীক্ষার ফল ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন একেবারে বরবাদ করে দেয়।
আর ইতোমধ্যে তার দেখা ছোট ছোট স্বপনগুলোর বাস্তবতা দেখতে পায় সে। পূরন হতে থাকে সেই সব স্বপ্ন।
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় হিমেল। ইঞ্জিনিয়ার সে হবেই। সে ভেবে নিয়েছে যে স্বপ্ন সত্যি হয়, যদি স্বপ্নকে লালন করা যায়। জেনারেল এর আশা ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হয় সরকারী পলিটেকনিক এ। চার বছর মেয়াদী কোর্স করতে অনেক ঝড় সইতে হয় তাকে। কখনো আর্থিক অস্বচ্ছলতা, কখনো বখাটে লোকেদের অত্যাচার, কখনো মানুষের মুখের তিরস্কারের স্বীকার হওয়া আবার কখনো পারিবারিক কলহ। কিন্তু হাল ছাড়ে না সে। কারন তখন তার ভিতরে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে গিয়েছে। চার বছর ডিপ্লোমায় এমন কোন কাজ (ভালো থেকে খারাপ) নেই সে করে নাই।
হিমেল সবসময় একটা কথা বলত যে, “আমরা যদি প্রতিদিন সকালে প্রতিজ্ঞা করি যে আজ আমরা নতুন কিছু শিখে বা নতুন কোন জ্ঞান অর্জন করে তবেই বাড়ি ফিরবো, তাহলে জীবনে কোনোদিন আমাদের জ্ঞানের অভাব হবে না। কারন শেখার ইচ্ছা থাকলে ফাকা রাস্তায় তাকিয়েও অনেক কিছু শেখা যায়।”
ডিপ্লোমা শেষ করে সে একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। সেখানে অনেক খরচ থাকায় বিভিন্ন শারীরিক পরিশ্রম করে টাকা আয় করে চালাতে থাকে তার পড়াশুনা প্রয়োজনের তাগিদে সে বাসের হেলপার, টিউশন মাস্টার, সিএনজি ড্রাইভার, লেবার এমনকি রিকশাওয়ালাও সাজতে হয়েছে তাকে। শুধুমাত্র তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে। এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করে শেষ হয় তার বিএসসি। তারপর এমএসসি।
হিমেল সঙ্গে কথোপকথনে একদিন সে আমাকে বলেছে “স্বপ্ন দেখুন, স্বপ্ন পুরন হয়।”
জানতে চান আজ সে কেমন আছে?
কোথায় আছে?
আজ সে ইঞ্জিনিয়ার।
রাশিয়ায় এক কোম্পানিতে DBA হিসেবে চাকরি করে।
তার ভিজিটিং কার্ড এ কি লেখা আছে জানেন?
লেখা আছে……
Engineer Himel Himadree
Database Administrator (DBA)
এটা ছিল হিমেলের স্বপ্ন। আর আজ এটাই বাস্তব।
This Post Has 0 Comments