Skip to content

বাবা “একটি খোলা চিঠি”

“কেমন আছ?” প্রশ্নটা আজ অর্থহীন। কি দিয়ে শুরু করবো জানিনা। শুধু জানি তুমি বাবা। আমার অস্তিত্বের পরিকল্পনাকারী।

তোমার উপস্থিতিতে বুঝিনি বাবা ডাকের অর্থ। কখনও সেভাবে তাকানো হয়নি তোমার দিকে। তবুও আজ চোঁখ বুজিলেই তোমাকে দেখতে পাই। দেখতে পাই তোমার শিক্ষা, তোমার কর্ম, তোমার আদর্শ, তোমার সততা আর তোমার ভালোবাসার সীমা। তুমি শিখিয়েছিলে কিভাবে লাখো মানুষের ভিড়ে নিজেকে একটু অন্যভাবে আবিষ্কার করা যায়, প্রকৃতি থেকে শিক্ষা কিভাবে গ্রহন করা যায়। তুমি শিখিয়েছিলে, “বুদ্ধি দিয়ে নয়, বিবেক দিয়ে বিচার করতে হয়”। আজ আমার সৃষ্ট সকল লেখনীর অনুপ্রেরনা একমাত্র তুমি। তুমি বলেছিলে, “তলোয়ার অপেক্ষা কলম অধিক ধারালো”। বাংলা সাহিত্যে তোমার জ্ঞানের ভান্ডার ছিল আমার দৈনন্দিনের লাইব্রেরী। এ জীবনের যত শিক্ষা সব শেখার সূত্রটাও বাবা তোমার কাছ থেকে পাওয়া। আজ আমার কলম চলে না। ভয় পাই। মনে হয় যদি মাঝপথে থেমে যাই? আমার যে লাইব্রেরীটা নেই।

তোমার সততা আমাকে মনে করিয়ে দেয় প্রতিদিনের বাড়ি ফেরার গল্প।

রাত দশটা,

তোমার ফোন,

“কিরে বাড়ি না আসিস?”।

অতঃপর নিঃশব্দ পায়ে বাড়িতে ঢোকা।

এখন রাত দশটা বাজলে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি কিন্তু কোন ফোন আসে না! তবুও বাড়িতে ঢোকার সময় কোন শব্দ করতে পারি না। মনে হয় তুমি ঘরেই আছ। তুমি যখন অসুস্থ ছিলে, প্রতিবার বাড়িতে ঢোকার সময় আগে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতাম, তুমি ঠিক আছ কি না। একদিন হঠাৎ বাড়ি ফেরার সময় দেখি তুমি অস্বাভাবিকভাবে মেঝেতে শুয়ে ছিলে। সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। এখন জানালাগুলো বন্ধ থাকে। তোমাকে দেখতে পাই না। বুকের ভিতরে বিস্ফোরণ হতে থাকে।

শেষবার যখন তোমার সাথে ফোনে কথা বলেছিলাম তখন তুমি বলেছিলে, “ভালো করে অফিস কর, পরে কথা বলবো”। তারপর এতই অভিমান করলে যে চিরদিনের জন্য আর কোন কথাই বললে না আমার সাথে। শুধু একবার তাকিয়ে কাঁদলে। এখন কি শুধুই তাকাও? কাঁদো না? এখন আর কেন বলো না, “অনেক বড় হও”।

তুমি শুধু দোয়া রেখো। আমি বড় হব বাবা, অনেক বড়, তুমি যত বড় বলেছিলে তার চেয়ে অনেক বড়। আমি প্রমাণ করে দেব, আমি তোমার সন্তান। তোমার আদর্শের ভবিষ্যৎ। তোমার মেধায় শিক্ষিত। “বটবৃক্ষ যখন দন্ডায়মান থাকে তখন তার পাকা ফল পথিকের হয়তো একটু বিরক্তির সৃষ্টি করে, কিন্তু যখন থাকে না পথিক তখনি বুঝতে পারে তার ছায়ার কী প্রয়োজনীয়তা”। বাবা তুমি হয়তো জানো না, তুমি শুধু আমাদের না তুমি এতীম করেছো একটি সুস্থ সমাজকে। তুমি একটুও ভেবোনা বাবা, তোমার মঙ্গল কামনায় হাজারো বিবেকবান তোমাকে স্রদ্ধাভরে স্বরন করে। তুমি শুধু দোয়া রেখো, আমি যেন তোমার রেখে যাওয়া অসম্পূর্ন কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারি এবং তোমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারি।

পরিশেষে তোমার জন্য সার্বক্ষনিক প্রার্থনা, “ওপারে ভালো থেকো বাবা”।

This Post Has 0 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top