স্কুল বলতে আমরা বিদ্যালয় কে বুঝি। যা বিদ্যা এবং আলোর সন্ধি। বিদ্যালয় বললে কেমন জানি…
একটি বৃষ্টিস্নাত অন্ধকার রাত্রি
সেদিন রাতে প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টি হচ্ছিলো। ল্যাপটপে ফেসবুকিং করছে রাসেল।
হথাৎ চেচামেচিতে চমকে উঠে হেডফোন খুলে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে রাসেল।
হ্যা ঠিকই ধরতে পেরেছে…
ওর বাবার প্রতিনিয়ত কর্যকলাপ। কিন্তু আজ ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কোন একটা সমস্যা আঁচ করে রাসেল।
তারপর হঠাৎ কানে আসে…
“আমি আর কোন টাকা পয়শা কাউকে দিতে পারবো না। কারো মদ-গাঁজার জোগান আমি কেন দিতে যাবো। সারাটা জীবন যাদের জন্য কষ্ট করলাম, তাদের কেউই একটু শান্তি দিলনা আমাকে। আমি আর এক মূহুর্ত সহ্য করবো না। সবাই এই মূহুর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।”
রাসেল বুঝতে পারে, বাক্যবান তার দিকে নয় আরেকজনকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। আবার তাকেও একেবারে বাদ রাখা হয়নি!
কারো সাথে কোন কথা না বলে ঘুমাতে চায় রাসেল। কিন্তু পারে না। মনের মধ্যে বারবার প্রশ্ন জাগতে থাকে, কেন পরিবেশটা আজ এরকম? কিসের এত কলহ? কেনইবা তাকে পারিনা সুখ দিতে? আমরাও কি আদৌ সুখি??
অতীতে হারিয়ে যায় রাসেল…
মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। বাবার একটা দোকান থাকায় বেশী সময় সেখানেই ব্যাস্ত থাকতো। মায়ের একটা চাকুরী। তিনিও ব্যাস্ত।
প্রতিদিন যখন সকাল হতো, বাবা চলে যেত দোকানে আর সপ্তাহে তিনদিন মায়ের অফিসে যাওয়ার জন্য গোছগাছ। অসহায়ের মত মায়ের ব্যাস্ততা দেখে যেত ছোট্ট রাসেল। তারপর মায়ের চলে যাবার পথে রিক্সার পিছনের রড ধরে অহেতুক কিছুদূর পথ দৌড়ানো। আর হতাশ হৃদয়ে মায়ের চলে যাবার পথে তাকিয়ে থাকা।
হয়তো এ পথেই রয়েছে ভালোবসার ঠিকানা।
হয়তো এ পথেই রয়েছে জীবনের অজানা।
বাকী দিনটা বন্ধুদের সাথে ভালো খারাপ মিলে কেটে যায়। আর সন্ধ্যা হলেই শুরু সেই কলঙ্ক, সেই অন্ধকার, সেই অনাচার, পাপ।
রাসেলের বাবা-মা প্রতিনিয়ত ঝগড়া-কলহ এমনকি শারীরিক নির্যাতনেরও স্বীকার হতো ওর মা। এভাবেই চলতে থাকে। বড় হতে থাকে রাসেল।
গল্পটা শুধুমাত্র রাসেলের পরিবারেই আবদ্ধ নয়। আশেপাশের প্রায় প্রত্যেকটা পরিবারের পরিবেশ একই রকম কলহময়।
এই তপ্ত, তেতো আবহাওয়ায় বড় হয়ে ওঠে রাসেল। অর্থের অভাবে আর বাবার সদিচ্ছায় খুব ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছে সে।
রাসেলের বড় ভাই প্রতিষ্ঠিত। নিজের বেখেয়ালি চলনের কারনে আজও নিজের পরিবারের উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। উপরন্তু বিভিন্ন নেশায় জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। যার কারনেই এত অশান্তি।
একটা ছোট বৃক্ষ রোপনের পর কোন অবলম্বন খুটির সাথে সেটাকে সজোরে চেপে বেধে রাখলে বৃক্ষ বড় হবে ঠিকই কিন্তু বাধন খুলে দিলেই আবার হেলে পড়বে। কিন্তু প্রথম থেকেই হালকা অবলম্বন দিলে ধীরে ধীরে বৃক্ষটি একসময় স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। রাসেলের বাবা সর্বদা গড়তে চেয়েছেন শক্ত অবলম্বন, হতে দেননি স্বাবলম্বী। মাথার উপরে হয়েছে ছাদ কিন্তু আসতে দেয়নি আলো। তিনি সারাজীবন শুধু ভেবেছেন যে কোনটা করা যাবে আর কোনটা যাবে না। কখনও ভাবেন নাই কি করলে তার সন্তানেরা সুখি। তিনি সন্তানদের কাছে শুধু সুখ চেয়েছেন কিন্তু দিতে ভুলে গেছেন।
একটা মেয়েকে ভালোবাসতো রাসেল। পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে ত্যাগ করেছে ভালোবাসা। বাবা-মা কে অনেক ভালোবাসে কিন্তু তাদের বুঝতে দেয় না। কখনও কারো উপর রাগ হলে বা অভিমান হলে কাউকে কোন দোষারোপ না করে একাকী বসে কাঁদে। যাতে তারা কষ্ট না পায়। কখনও কোন জিনিস দাবী করে চায় না রসেল। সবসময় চায় কিভাবে একটা সুখি পরিবার গড়া যায়।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে রাসেল।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আর প্রতিজ্ঞা করে, “সেই দিনই বাড়ি ফিরবো, যেদিন শান্তি ফিরবে।”
ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে রাসেল। বাড়িতে যায় না। মাঝে মধ্যে বাবা-মার সাথে কথা বলে। আর সময় পেলে ঘুড়তে যায় শেরপুর জেলার গজনী অবকাশ অথবা মধুটিলা ইকোপার্কে। রাসেলের ভাষায়, “সেখানে গেলে আমি প্রকৃতির সাথে কথা বলতে পারি, চিৎকার করে কাঁদতে পারি। আসলে বনের গাছগুলো আমার থেকে কষ্ট কেনে বিনিময়ে দেয় একটু ভালোবাসা আর প্রশান্তি।।”
This Post Has 0 Comments